নাজমুল সাকিব আরাব। নাহ, আরব দেশের কেউ না, বাংলাদেশি এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ছেলেটির গ্রাজুয়েশন এখনও শেষ হয়নি, তবে ছাত্রাবস্থায়ই গত দুইবছরে নিজের স্বল্প পুঁজি আর চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসা Fabricloud Apparels. ফ্যাব্রিক্লাউড গার্মেন্টস পোষাক প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে আরব নিজের তত্ত্বাবধানে দেশ বিদেশের অর্ডারের সাপ্লাই দেন। ফ্যাব্রিক্লাউডেরই নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড THOUGHT যার মাধ্যমে তিনি খুচরা বিক্রির উদ্যোগ নেন। চার মাস আগে স্টোরিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেই বানিয়ে নিয়েছেন নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট, তারপর থেকে অনলাইন ব্যবসার ম্যানেজমেন্ট চলছে স্টোরিয়া ড্যাশবোর্ড থেকেই! চলুন শুনি তার ব্যবসার সাতকথন।

 

thought6

 

thought5

উদ্যোগের পেছনের গল্প

কলেজে থাকতেই নিজের ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন দেখতাম। আরএমজি সেক্টরে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে এইদিকেই কিছু করার উদ্যোগ নিই। কাজ শুরু করি টি-শার্ট, পোলো, জিন্স দিয়ে, তবে এখন জার্সি, ট্রাউজার, হুডি, বক্সার, ব্লেজার, জ্যাকেট সহ সব ধরণের গার্মেন্টস আইটেম নিয়েই কাজ করা হয়। ক্রেতার চাহিদা মত পণ্যের ডিজাইন, প্রস্তুতকরণ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং শিপমেন্টের পুরো প্রক্রিয়াই নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে সম্পাদন করি।

 

সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে কোয়ালিটি প্রোডাক্ট সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতার কাছে পৌছে দেয়াই আমাদের অঙ্গীকার।

 

নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। সবকিছু কিভাবে ম্যানেজ করেন?

ঘড়ির কাটা আর দিনের আলো দুটোই এখন শত্রু আমার। সকাল ৮ টা কাস্টমার এর কল ভাইয়া এটা অর্ডার করতে চাচ্ছি, পেজ এ নক দিতে বলে ঘুমিয়ে যাই জোর করে। ৯.৩০ এর পর সেটা আর কোন ভাবেই সম্ভব না। উঠেই মুখ ধুয়ে কাস্টমার রিপ্লাই দেয়া শুরু হয়। একটার পর একটা কল কাস্টমারের, ফ্যাক্টরি থেকে কল ভাইয়া এটা ভুল হয়েছে, ওইটা শর্ট পড়েছে, এটা নষ্ট হয়েছে কত কাহিনী। ১২ টা নাগাদ ফ্যাক্টরি গিয়ে সব ঠিক ঠাক গুছিয়ে দিয়ে লাইন থেকে ৩.৩০ নাগাদ বের হই। আর একটু পর পর রিপ্লাই, লিংক কপি পেস্ট, কাস্টমার এর টাকা এসেছে কনফার্মেশন দেয়া, অর্ডার করার পর কিছু চেঞ্জ করলে তা আবার সাথে সাথে ডাইরি তে লিখে রাখা। বাসায় এসে বিকাল বেলা প্রতিদিনের ১৫-২০ ডিজাইন গুছিয়ে ফ্যাক্টরিতে পাঠানো না হলেও নিম্নে ২ ঘন্টার কাজ। সন্ধ্যার পর পেজে প্রচন্ড একটা চাপ আসে যে ওয়াশরুমে গেলেও ফোন টা সাথে নিয়ে রিপ্লাই দিতে যেতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ টা কমেন্ট আর মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে দেয় একজন, রাতে আবার প্রোডাক্ট আসলে তা প্যাক করে রাখি, হোম ডেলিভারির লোক এসে নিয়ে যায়। ঢাকার বাহিরের প্রোডাক্ট আরেকজন নিয়ে দিয়ে আসে। এই সব গোছগাছ করতে যখন রাত ২ টা বেজে যায় তখন সব বন্ধ করে আজকের দিনের সব মেসেজগুলো চেক করি, পেজের যে কোন কাস্টমার তাড়াহুড়ায় ছুটে গেল কিনা। তাদের আবার নক দিয়ে অর্ডার নেই। সাথে কাস্টমার কল, ফিল্ড কল, প্রোডাক্ট রিসিভ কল, না রিসিভ কল ওগুলো তো আছেই। কোথায় কত পেমেন্ট গেল কত আসলো, মাস শেষ এ সেলারি দেয়া, কত লস কত লাভ। এভাবেই তো চলছে!

 

অনলাইনে বিক্রি কিভাবে বাড়াচ্ছেন? কি ধরণের মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে থাকেন?

আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশি বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পণ্য প্রদর্শন করি। আগের করা কাজগুলোর স্যাম্পল এবং ক্রেতাদের রিভিউ অবশ্যই নতুন ক্রেতা পেতে সহায়তা করে। প্রোডাক্ট সিলেকশনে টাইমিং টা খুব জরুরী, এখন যেমন বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ফুটবল জার্সি ভাল চলছে, সারাবছরই কমবেশি ক্রিকেটের জার্সি চলে। রিটেইল সেলও পেইজ এবং সাইটের মাধ্যমে হয়। ক্রেতাদের রিভিউই মার্কেটিংয়ে বেশি সহায়তা করে। এছাড়া ফেসবুকে সরাসরি প্রোডাক্ট এবং ওয়েবসাইটের অ্যাড চালাই।

 

thought2

অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা যেমন অর্ডার গ্রহন, প্রোডাক্ট ডেলিভারি, পেমেন্ট সিস্টেম, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদি কিভাবে করছেন?

ফেসবুক, ওয়েবসাইট এবং সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে অর্ডার গ্রহন করি। সাধারণত ৩০% অ্যাডভান্স পেমেন্ট নিই বিকাশের মাধ্যমে।‘বাহক’ এর মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারির কাজ করে থাকি, তাদের সার্ভিসে আমি সন্তুষ্ট। অর্ডার প্রসেসিং এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্টের জন্য স্টোরিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করি।

 

thought3

স্টোরিয়া প্লাটফর্ম সম্পর্কে…

প্রথমেই বলতে হয় যারা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কিছু জানেন না তাদের জন্য স্টোরিয়া খুবই সহায়ক একটি প্লাটফর্ম। আমি নিজেই নিজের সাইট বানিয়েছি, অ্যাডমিন প্যানেলটি আমার খুব ইউজার ফ্রেন্ডলি লেগেছে।

 

স্টোরিয়ার কোন বৈশিষ্ট্য বা ফিচার বেশি ভাল লাগে?

অর্ডার প্রসেসিং সিস্টেম এবং কেনাবেচার হিসাবের রিপোর্ট। এছাড়া কাস্টমার সার্ভিসও ভাল পেয়েছি। যে কোন টেকনিকাল জটিলতায় দ্রুত সহযোগিতা পাওয়া যায়।

 

 

যারা নতুন ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানাতে চাচ্ছে বা অনলাইন বিজনেস সলিউশন খুঁজছে তাদের জন্য কি স্টোরিয়াকে রিকমেন্ড করবেন? কেন?

ওই যে আগেই বলেছি স্টোরিয়া ই-কমার্স ওয়েবসাইট বানানো এবং পরিচালনার কাজটি একদম সহজ করে দিয়েছে। এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আমার ব্যবসার ম্যানেজমেন্টে অনেক সুবিধা হয়েছে। অবশ্যই স্টোরিয়া রিকমেন্ড করি।

 

এরকম আরো Powered by Storrea ওয়েবসাইট দেখতে এবং সেই উদ্যোক্তার গল্প শুনতে ভিজিট করুন Customer Stories

(Visited 514 times, 1 visits today)
1

Comments