স্থানীয় উদ্যোগ বলতে এলাকাভিত্তিক ছোট থেকে শুরু করা, আপনার ব্র্যান্ডটিকে একটু প্রতিষ্ঠিত করা, চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসার পরিধি বাড়ানো।

আমাদের দেশে আমরা সবাই কম বেশী পালাতে চাই। কেউ বিদেশ চলে যায়, কেউ জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে। একটু পরিশ্রম করে স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করেই কিন্তু ফেরানো যায় ভাগ্যের চাকা। নিজের এলাকায় থেকে ব্যবসা করে সম্মানিত জীবনের চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে? আপনিও হতে পারেন স্থানীয় অনলাইন উদ্যোক্তা। স্থানীয়ভাবে অনলাইন ব্যবসা করার বেশকিছু সুবিধা আছে বৈকি!

স্থানীয় ক্রেতা এবং পণ্যের চাহিদা বোঝা

যে এলাকায় আপনি বড় হয়েছেন, তার অনেক কিছুই চেনা জানা। আপনি আপনার এলাকার ক্রেতাসাধারণের মন মানসিকতা জানেন, তাদের আয়ব্যয়ের সামঞ্জস্য সম্পর্কে ধারণা রাখেন এবং সেই সাথে তাদের মধ্যে কি কি পণ্যের চাহিদা আছে তাও অনুমান করতে পারেন। সাধারণত এক্ষেত্রে এলাকায় যে সকল পণ্য সচরাচর পাওয়া যায় না, ঢাকা বা অন্যত্র থেকে সোর্স করতে হয় সেই পণ্যেরই চাহিদা বেশি থাকে। তাই আপনি খুব সহজেই ক্রেতার চাহিদার এই পণ্যগুলো এনে স্থানীয়ভাবে বাজার দখল করতে পারবেন।

স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসার সুযোগ

শুধুমাত্র ইচ্ছা থাকলেই ব্যবসা শুরু করা যায় না, ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনার জন্য পুঁজিরও প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই প্রচলিত ব্যবসায় অনলাইনে ব্যবসার চাইতে মূলধন অনেক বেশী লাগে। অনলাইনে ব্যবসা করার সব চেয়ে ভালো দিক হলো ছোট পরিসরেই শুরু করা যায়, বিনিয়োগের ঝুঁকি কম। আর স্থানীয়ভাবে শুরু করলে তা আরো সুবিধাজনক হয়। কারণ স্থানীয় ভাবে আপনার পণ্যের রক্ষণাবেক্ষন, মার্কেটিং, জনবলের খরচ ইত্যাদি ঢাকায় থেকে ব্যবসা করার চেয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ী। আর ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর সুযোগ তো থাকছেই।

ফ্রি মার্কেটিং

স্থানীয় ভাবে অনলাইন উদ্যোক্তার অন্যতম বড় সুবিধা হলো নিজের ব্যক্তি পরিচিতি বা সেলফ ব্র্যান্ডিং। অনলাইনে ব্যবসার বড় বাঁধা হলো ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে আস্থাহীনতার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে আপনার পরিচিতির মাধ্যমেই কিছু ক্রেতা পেয়ে যাবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে। আর সেই পরিচিতির নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়েই ক্রেতাদের মাঝে পণ্যের মার্কেটিং করতে পারবেন। একবার আপনার সুনাম ছড়ালে, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ক্রেতারাই আপনার হয়ে মার্কেটিংয়ের কাজ করে দিবে। তাদের কাছে মনে হবে এতো ঘরের ছেলে, কিছু হলে পাশে থাকবে, তারাই একসময় আপনার জন্য গর্ব করার সুযোগ পাবে। এলাকাভিত্তি অনলাইন ব্যবসায় তাই আপনাকে অনেক বাজেট নিয়ে মার্কেটিং করতে হবে না।

ঝামেলাবিহীন বিজনেস অপারেশন

স্থানীয় ভাবে আপনি অনলাইনে ব্যবসা করলে, ক্রেতারা অনেকে ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইটে পণ্য দেখে আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। পণ্য ডেলিভারি সংক্রান্ত ঝামেলার ব্যাপার সচরাচর আমরা যা দেখে থাকি এক্ষেত্রে আপনার কম হবে, পণ্য ডেলিভারির সময়ও তুলনামূলক কম লাগবে। ডেলিভারির চার্জ নিয়েও হয়তো বাড়তি চাপ ক্রেতাকে নিতে হবে না। সর্বোপরি আপনার ব্যবসার ম্যানেজমেন্ট সহজতর হবে।

এলাকাভিত্তিক ব্যবসায় সামান্য কিছু অসুবিধা যা মাথায় রাখতে হবে তা হলো পণ্যের সোর্সিং। অনলাইনে যদি অন্যের থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রি করেন তাহলে মার্জিন খুবই কম থাকবে, তাছাড়া তাদের উপরে নির্ভর হয়ে থাকাটাও দীর্ঘমেয়াদে ভাল হবে না। ফার্স্ট হ্যান্ড সোর্সিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত ঢাকা যাওয়া আসা বা সরাসরি ইম্পোর্টারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। ঢাকা থেকে নিয়মিত পণ্য পরিবহনের একটি বাড়তি খরচ বহন করতে হবে যা খুবই স্বাভাবিক। নিয়মিত চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের স্টক সামলানোর ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। সর্বপরি আপনাকে পণ্যের সোর্সিং নিয়ে কিছুটা বাড়তি কাজ এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

স্থানীয় উদ্যোগ বলতে শুধু যে ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসা করবেন তাই নয়, আপনি চাইলে ঢাকার মধ্যেও এলাকা/মহল্লাভিত্তিক শুরু করতে পারেন। জেলা শহরে থাকলে সেই বিভাগীয় ব্যবসার চিন্তা করতে পারেন। যেমন আপনি যদি যশোরে থেকে অনলাইন ব্যবসা করতে চান তাহলে প্রথমে যশোর, পরে খুলনা বিভাগ এভাবে চিন্তা করুন; ঢাকা চট্টগ্রামে শুরুতেই আপনার ব্যবসা সম্প্রসারণের দরকার নেই। মূল ব্যাপারটি হলো ছোট থেকে শুরু করা, আপনার ব্র্যান্ডটিকে একটু প্রতিষ্ঠিত করা, চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসার পরিধি বাড়ানো।

শুরু করি একটি স্থানীয় ই-কমার্স

(Visited 447 times, 1 visits today)
0

Comments