যে কোন নতুন ব্যবহারকারীর জন্যে ফেসবুকের অ্যাড সিস্টেম যথেষ্টই জটিল ও দুর্বোধ্য। শুধু কার্ড থাকলে তা দিয়ে বুস্ট দিলেই কখনো আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবেন না। ফেসবুক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপনী মাধ্যম হিসেবে তার ব্যবহারও অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্যে ফেসবুক পেইজকেই বেছে নিয়েছেন সহজ ও সময় সাপেক্ষ সমাধান হিসেবে। ফেসবুকের প্রমোশন কখনো তারা নিজেরা করছেন কখনো বা পরিচিত ফেসবুক মার্কেটিং এজেন্সি অথবা বিশেষজ্ঞ দিয়ে করাচ্ছেন। অতীতে ফেসবুক এ প্রমোশন চালিয়ে বেশ ভালো রকম Sales জেনারেট করা গেলেও বর্তমানে এই হার বেশ ফিকে হয়ে এসেছে। আমাদের সাধারণ উদ্যোক্তাদের মাঝে তাই হাহুতাশ ও অভিযোগের অন্ত নেই। তারা ডলার খরচ করে যাচ্ছেন কিন্তু কোন রকম রিটার্ন তুলে আনতে পারছেন না।

 

 

সফল ফেসবুক পেইজ প্রমোশন নির্ভর করে অনেকগুলো ফ্যাক্টর এর উপরে। কন্টেন্ট থেকে শুরু করে, অডিয়েন্স সিলেকশন, ইমেজ কোয়ালিটি, বাজেটিং, পেইজের সামগ্রিক কন্টেন্ট কোয়ালিটি সবকিছু মিলিয়েই আসলে প্রমোশনের সফলতা নির্ভর করে।ফেসবুক পেইজের প্রমোশন থেকে হয়তো ডিরেক্ট সেলস আসবে না কিন্তু আপনি এই প্রমোশনের ফলাফল কে কাজে লাগাতে পারেন নানাবিধ উপায়ে। তেমনই একটি কার্যকরী পদ্ধতি হল “Facebook Pixel“। চলুন জেনে নেই ফেসবুক অ্যাডে পিক্সেল এর ব্যবহার কিভাবে আপনার অনলাইন ব্যবসার মার্কেটিং এর কার্যকর একটি টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

 

 

ফেইসবুক পেইজের প্রমোশনের জন্যে পিক্সেল কিভাবে কাজ করে সেটি জানার আগে জেনে নেই কি কি লাগবে পিক্সেল ব্যবহার করতে।
  • নিজের ফেইসবুক পেইজের অ্যাড অ্যাকাউন্ট থেকে পিক্সেল কোড সংগ্রহ করতে হবে।
  • নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইটে সেই কোডটি রাখতে হবে।

 

 

Facebook Pixel দিয়ে কি সুবিধা পাওয়া যাবে

 

  • ফেসবুক অ্যাডের পারফরমেন্স মনিটরিং। প্রত্যেকটি অর্ডার অথবা কনভার্শনের জন্যে কত ডলার খরচ হচ্ছে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখা যাবে। আর পরবর্তীতে অ্যাড দেয়ার সময় বাজেটিং এর ও সুবিধা হবে।
  • ফেসবুক অ্যাড অপটিমাইজেশন ও অডিয়েন্স সিলেকশনে এগিয়ে থাকা। Facebook Pixel এর সাথে যদি “Optimize for website conversions” বিডিং অপশন হিসেবে যোগ করে দেওয়া যায়, ফেসবুক তাদেরকেই অ্যাডটি দেখাবে যাদের ক্রেতা বনে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • অডিয়েন্স রিটার্গেটিং করে পরে তাদেরকে টার্গেট করে আবার অ্যাড দেওয়া যাবে এবং তাদেরকে ক্রেতা হিসেবে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যাওয়া।

 

 

ফেসবুক প্রমোশনের ক্ষেত্রে কিভাবে Facebook Pixel ব্যবহার করবেন 

 

  • প্রথমেই Pixel তৈরি করে নিতে হবে।
  • Ads Manager, ads create tool অথবা Power Editor (Chrome browser ব্যবহার করুন) যান।

অ্যাড ম্যানেজার থেকে আপনার পিক্সেল কোডটি সংগ্রহ করুন

 

 

  • অ্যাড ম্যানেজার থেকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
    • টপ মেন্যু থেকে “Tools” নির্বাচন করুন।
    • Create A Pixel” এ ক্লিক করুন।
    • View Pixel Code” এ ক্লিক করুন এবং কোডটি Copy করুন।
    • Pixel টির একটি নাম দিন। একটি অ্যাড ম্যানেজার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পিক্সেল কোডই ব্যবহার করা যায়। তাই প্রাসঙ্গিক ব্যবসায়িক নামই দিন যেটি পরে ব্যবহার করা যাবে।
  • Facebook Pixel টি অ্যাড করুন আপনার ওয়েবসাইটে
    • কোডটি সংগ্রহ করে আপনার ওয়েবসাইটের যেই যেই পেইজ এ দেখাতে চান সেখানে <head>…</head> এর মাঝে সেই কোডটি পেস্ট করে দিন। স্টোরিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করলে খুব সহজেই এই কাজটি করতে পারবেন, স্টোর অ্যাডমিন ড্যাশবোর্ড থেকে Apps>External Apps>Facebook Pixel Integration এ কোডটি পেস্ট করে সেভ করুন।

ওয়েবসাইটে কোডটি প্লেস করুন

 

  • ব্যাস খুব সহজেই হয়ে গেল পিক্সেল আপনার ওয়েবসাইটে ইন্টিগ্রেশন। পিক্সেল টি কাজ করছে কিনা সেটি ভেরিফাই করার ব্যবস্থাও আছে। সেটি নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করবো আশা করছি।
অ্যাড অপটিমাইজেশন

 

  • অ্যাড অপটিমাইজেশন করুন পিক্সেল দিয়ে
    • নতুন অ্যাড ক্রিয়েট করুন Power Editor অথবা Ads Create Tool থেকে।
    • “Increase Conversions on your website” অপশনটি নির্বাচন করুন।
    • যে Pixel টি তৈরি করেছেন সেটি নির্বাচন করে নিন।
    • অ্যাড টার্গেটিং এর বাকি ধাপগুলো শেষ করুন। একেবারে শেষে “Pricing and Bidding” সেকশানে “Website Conversions” নির্বাচন করে দিন। ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার জন্যে আসলেই যারা সত্যিকারের ক্রেতা তাদের কাছেই দেখাবে এই অ্যাড।
অ্যাড অডিয়েন্স রিটার্গেটিং

 

  • অ্যাড অডিয়েন্স সিলেক্ট করুন এবং রিটার্গেট করুন
    • Ads Manager এ যান।
    • Tools এ ক্লিক করুন । Audience সিলেক্ট করুন।
    • Create Audience সিলেক্ট করুন।
    • Custom Audience সিলেক্ট করুন।
    • Website Traffic সিলেক্ট করুন।
    • Custom Audience এর একটি নাম দিন। একটি Website Traffic অপশন সিলেক্ট করুন। Create Audience এ সিলেক্ট করুন।
    • নির্দিষ্ট কোন Keyword অথবা কোন একটি নির্দিষ্ট URL এ কোন কাস্টমার আসছে এইগুলোও আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। যেমন ধরুন Salwar Kamiz নাম দিয়ে যদি কোন URL থাকে তবে সেটিতে কারা কারা আসছে তাদেরকে আপনি অডিয়েন্সের টার্গেট হিসেবে ঠিক করে দিতে পারেন।
    • কাস্টম অডিয়েন্স প্রথমে ০ থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে যত ভিজিটর আসবে ততই এই অডিয়েন্স লিস্ট বড় হতে থাকবে।
    • এই অডিয়েন্স এর হিস্ট্রি থাকবে ৩০~১৮০ দিন পর্যন্ত। এই কাস্টম অডিয়েন্সকে টার্গেট করে যখন তখন অ্যাড প্রমোশন দিতে পারবেন যখন আপনি কোন একটি প্রমোশনের জন্যে অডিয়েন্স সিলেক্ট করবেন।

 

 

  • অ্যাড পারফরম্যান্স পরিমাপ করুন
অ্যাড তৈরি হয়ে গেলে এবং সেটির প্রমোশন চালু হয়ে গেলে Ads View তে যান Ads Manager থেকে। সেখান থেকে Conversions, Results, Cost per Conversion দেখে নিন। কোন পেইজ থেকে কত কাস্টমার আসলো, কিংবা কত কাস্টমার আপনার Checkout থেকে চলে গেল তাদের তথ্যও আপনি রেখে দিতে পারবেন। তাদেরকে পরবর্তীতে আবার টার্গেট করে লোভনীয় অফার দিয়ে আপনার সাইটের স্থায়ী ক্রেতা বানিয়ে ফেলতে পারবেন।

 

সাম্প্রতিক ফেসবুক সেল কমে যাওয়া নিয়ে হতাশায় ভোগা অনলাইন উদ্যোক্তাদের কে সহায়তা করার লক্ষ্যেই এই লেখা। ফেসবুকের ব্যবসা করতে প্রত্যেকদিনই নামছেন নতুন নতুন ব্যবসায়ী। একেকজন একেক পণ্য নিয়ে। এরই মাঝে আপনার পণ্যের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে এবং ব্যবসার বুদ্ধিবৃত্তিক তথ্যগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই এগিয়ে যেতে পারেন অন্য সবার চেয়ে। তাই তৈরি করুন নিজের ব্র্যান্ডের একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং মানসম্মত Content দিয়ে একটি ফেইসবুক বিজনেস পেইজ।

 

(Visited 1,189 times, 1 visits today)
2

Comments