নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, এমন যে কেউ একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন, বিগত বছরগুলোতে ইন্টারনেটের ব্যাপ্তি ও প্রবল প্রসার অন্য কোনো যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি। যে কারণে অন্তর্জালের জগৎ এখন সবার কাছে পৌছে গেছে, আর একই সাথে সাথে আর সব প্রযুক্তিগত বিষয়, সোশাল মিডিয়া ইত্যাদির পাশাপাশি পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক নিত্যনতুন অসংখ্য ব্যবসার উদ্ভব ঘটেছে।

আরেকটু ভালো মত খেয়াল করলে সাথে সাথে এটাও চোখে পড়ে, ঠিক যতটা জোরে সোরে এইসব অনলাইন উদ্যোগগুলো শুরু হচ্ছে, প্রথমদিকে যতটা সরব এদের উপস্থিতি, তাদের প্রায় সবাই কিছুদিন পরে নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে, এমনটার কিছুদিন পরে ব্যবসা প্রায় বন্ধ। শতকরা আশি ভাগ ই-কমার্স ওয়েবসাইট শেষ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্যে পৌছাতে অসমর্থ হয়। অনলাইন নির্ভর এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই হোঁচট খাবার পেছনে বেশিরভাগ সময়েই খুব সাধারণ বিষয়ে মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রায়ঃশই তারা খুব সামান্য কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল করে থাকেন, যেটা ই-কমার্স ব্যবসাকে সফল করবার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই ভুল-ত্রুটিগুলো না করার ব্যাপারে সাবধান থাকলে, চাইলেই হোঁচট খাওয়া থেকে বাঁচা যেতে পারে।

আসুন দেখে নেয়া যাক কি কি ভুল হয়ে থাকে এই সব ক্ষেত্রে।

 

প্রকৃত বিনিয়োগের অভাব

এটা খুব বেশিমাত্রায় সত্যি যে চাইলেই কেউ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট চালু করতে পারে। কিন্তু ব্যাবসার প্রসার চাইলে এবং লম্বা সময় ধরে টিকে থাকতে চাইলে একই সাথে বড় অংকের মূলধন এবং যথেষ্ট পরিমাণ পরিশ্রমেরও প্রয়োজন রয়েছে। এটা অনেকটা নতুন একটা স্থানে কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের শাখা খুলবার মত। এবং এর জন্য একই সাথে যথেষ্ট সময় এবং আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন।

অর্থ

যদি কোনো উদ্যোক্তা তার মূলধনের প্রায় সবটুকুই শুধুমাত্র তার ব্যবসার ইনভেন্টরিতে বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয় করে সেটাকে বিরাট সংগ্রহে পরিণত করবার পেছনে খরচ করেন, এবং বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তার কোনো বিনিয়োগ না থাকে, সেক্ষেত্রে বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়বে না, এবং ব্যাবসার অচলাবস্থা দেখা দেবে। এই অবস্থা পরিহার করবার জন্য মাসিক, দ্বি-মাসিক, ত্রৈ-মাসিক ভিত্তিতে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট করা ছাড়াও বিজ্ঞাপন ও প্রচারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।

ইনভেন্টরির দুর্বল ব্যাবস্থাপনা

একদম নতুন যারা শুরু করেন, তাদের জন্য এটি আসলেই ঝুকিপূর্ণ একটু বিষয়। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচুর পরিমাণে মালামাল স্টকে রাখলে ক্ষতির সম্ভবনা থাকে, ঠিক তেমনি খুবই স্বল্প আকারের ইনভেন্টরি গ্রাহকদের মাঝে বিরক্তি এবং হতাশার উদ্রেক করতে পারে, যার ফলাফল হিসেবে বিক্রি কমে যাবে, প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের সরবরাহকারীদের পণ্য সরবরাহের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, সে কথা মাথায় রেখে অনলাইন অর্ডারের বিষয়টি ব্যাবস্থাপনার আওতায় আনা উচিত।

প্রতিযোগিতা

অনলাইন মার্কেট যেমন যে কনো নতুন ব্যবসার প্রসারের জন্য বিরাট একটি সুযোগ, ঠিক তেমনি এটি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিশালী প্রতিযোগীদের দ্বারা ব্যবসার ধসিয়ে দেবার জন্যও সক্ষম। কাজেই, আপনাকে আপনার পণ্যের বিশেষত্ব অনুযায়ী তাদেরকে প্রচার করতে হবে, ক্রেতাদের কাছে বোঝাতে হবে কেন তাদের আপনার কাছে থেকে কেনা উচিত, ঠিক কোন সেবাটি আপনি দিচ্ছেন, যা অন্য কেউ দিতে পারছে না। বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কাছে বিরাট মার্কেট তৈরি করবার চাইতে, প্রথমদিকে বিশেষ সেবা ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আরম্ভ করলে সেটি এই ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দেবে।

বেহাল ওয়েবসাইট

ধরা যাক, আপনার খুবই ভালো একটি ব্যবসা আছে, আপনার পণ্যের চাহিদাও প্রচুর। এতোকিছুর পরেরো আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি যদি ভালো না হয়, তাহলে আপনার ব্যবসা সফলতার মুখ নাও দেখতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যেমন দ্রুত লোড হওয়া, মোবাইল ও ট্যাবলেটে ব্রাউজিং এর উপযোগী হওয়া, দৃষ্টিনন্দন হওয়া, কার্যক্ষমতা বেশি থাকা এবং অনলাইন নিরাপত্তা প্রদান করা।

নিম্নমানের পণ্যের ছবি

যে কোনো পণ্যের গুণাগুণ, বর্ণনা, কার্যক্ষমতার বিবরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার সাথে আরও দরকার সেই পণ্যের একটি ভালো ছবি। কারণ যখন কেউ কোনো পণ্যের বিবরণ আপনার ওয়েবসাইটে পড়বে, সাথে সাথে সে যাতে বিবরণের সাথে পণ্যের ছবিতে সাদৃশ্যতা খুজে পাওয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, ক্রেতা যে পণ্যটি কিনতে যাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে যেন তিনি সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

স্বল্প ওয়েব ট্রাফিক সম্পন্ন ওয়েবসাইট

যদি আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিকের পরিমাণ কম হয়ে থাকে, তার অর্থ আপনার সাইটে যথেষ্ট পরিমাণে ক্রেতারা ভিজিট করছেন না, যেটা একই সাথে সাথে আপনার বিক্রির পরিমাণের উপরও প্রভাব ফেলে। ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বৃদ্ধি করবার একটি উপায় হচ্ছে পে-পার-ক্লিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার সাইটে ভিজিটর নিয়ে আসা, এছাড়াও অন্যান্য বিষয়াবলী, যেমন ব্লগ, রিভিউ, কন্টেন্ট লেখা, সোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা, অন-সাইটে পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচার ইত্যাদি।

ধৈর্য্যের অভাব

অনলাইনে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় দুর্বলতাগুলোর একটি হচ্ছে এটি। লাভের মুখ দেখতে চাইলে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, যে কোনো ব্যবসাতেই লাভের মুখ দেখতে চাইলে, ব্যাবসা সম্প্রসারণ করতে চাইলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই হবে। ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই, নিবেদিতপ্রাণ থাকলে, পরিশ্রম করলে, এবং ই-কমার্স এর সঠিক প্রসার কৌশল অবলম্বন করলে আপনি সফলতার মুখ দেখবেনই।

বাংলাদেশে ইকমার্স ব্যবসা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে সে কথা আসলে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু অন্য যেকোন ব্যবসার মত এখানেও আসলে সবকিছু জেনে বুঝে নামাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অনলাইনেড় এই নতুন জগতে আমাদের সবার ব্যবসায়িক যাত্রা শুভ হোক।

 

নিজের একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট

 

(Visited 691 times, 1 visits today)
0

Comments