উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তাঃ রিচার্ড ব্র্যানসন
ফোর্বসের তালিকায় ৩৩০ তম বিলিওনিয়ার, আর ব্রিটেনের ১২ তম। বলা হচ্ছে রিচার্ড ব্র্যান্সনের কথা, চারশরো বেশি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০০ সালে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে যিনি নাইটহুড খেতাব পান।
ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় মন না বসা ব্র্যানসন ১৬ বছর বয়সেই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে তরুন-যুবকদের টার্গেট করে একটা ম্যাগাজিন বের করেন ‘স্টুডেন্ট’ নামে। ১৯৬৬ সালে বের হওয়া এই ম্যাগাজিনটির প্রথম ৫০০০০ কপি ফ্রি বিতরন করা হয় শুধুমাত্র প্রচারের জন্য। ব্র্যানসন অবশ্য বিজ্ঞাপন বাবদ ৮০০০ ডলার তুলে এই খরচ পুষিয়ে নেন। ফেল্টুস ছেলের তখন জেদ- পড়ালেখা যখন হোলনা, কিছু একটা করে দেখাতে হবে।
সাল ১৯৬৯। ব্রিটিশ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি তখন রাজত্ব করছে বিটলস, রোলিং স্টোনসের মত ব্যান্ডগুলো। তরুণ-যুবাদের মিউজিক ক্রেজকে পুঁজি করে ব্র্যানসন একটা রেকর্ড কোম্পানি খুলে বসেন ‘ভার্জিন’ নাম দিয়ে। ছোট্ট একটা রুম নিয়ে অফিস, চাহিদামত মেইলে পাঠিয়ে দেয়া হত এলবাম। যথেষ্ট টাকা হলে একটা দোকানও দেয়া হল অক্সফোর্ড স্ট্রীটে। ১৯৭২ সালে ব্র্যান্সন একটা রেকর্ডিং স্টুডিওই দিয়ে বসলেন অক্সফোর্ডশায়ারে।
রেকর্ডিং স্টুডিও লোকাল আর্টিস্টদের ভাড়া দেয়া হত। এই ছোট স্টুডিওতেই মাইক ওলফিল্ড রেকর্ড করেন তার বিখ্যাত গান ‘টিউবুলার বেলস’ যা তখন পাঁচ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় এবং ভার্জিনের খ্যাতি এনে দেয়। পরবর্তী ১০ বছরে ভার্জিন রেকর্ডস তৎকালীন নামকরা সব ব্যান্ডগুলোর রেকর্ড বের করে যা ব্র্যানসন ও ভার্জিনকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
তুখোড় ব্র্যানসন তার ব্যবসা ছড়াতে শুরু করেন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেকে যাচাই করাটাই ছিল তার মূল প্রেরণা। এয়ারলাইন, ট্রেইন, মোবাইল ফোন, পানীয়, মিডিয়া, স্পেস ট্যুরিজম ইত্যাদি মিলে আজ তার চারশ এর বেশি কোম্পানি। তার মতে, সুযোগ হল বাসের মত; একটা যাবে তো আরেকটা আসবে। কিন্তু সাফল্য পেতে হলে লেগে থাকতে হবে।
রিচার্ড ব্র্যানসন টুইটার-ফেসবুকে সক্রিয়। নিয়মিত ব্লগ লেখেন। তার ব্লগপোস্টগুলো হতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা।
বর্ণিল অদ্ভুতুড়ে জীবন যাপনের জন্য ব্র্যানসন সবসময়ই খবরের শিরোনাম। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে এরকমঃ “When life gives you lemon, make lemonade.” আমাদের জীবনের বৈরী পরিস্থিতিগুলোই আসলে আমাদেরকে সত্যিকারের পরীক্ষার মুখোমুখি করিয়ে দেয়। এরকম ছোট ছোট অভিজ্ঞতা আসলে তৈরি করে মানুষ কে বড় কোন প্রেক্ষাপটের জন্যে। জীবনের বাঁকে বাঁকে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন ব্র্যানসন সেগুলোকেই তিনি অনুপ্রেরণার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এইজন্যেই হয়তো তিনি রিচার্ড ব্র্যানসন; একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করছি। ব্র্যানসন এর নিজের জবানীতেই শুনি চলুনঃ
সেবার যাচ্ছিলাম ভার্জিন আইল্যান্ড এ। আমার একটা ব্যবসা ছিল কিন্তু কেউ আমাকে সেভাবে চিনতো না। একজন অপরূপা চেয়ে আছেন আমার অপেক্ষায়। যেতে আমাকে হবেই। এয়ারপোর্টে বসে আছি এমন সময় পিএ তে ঘোষণা আসলো আজকের মত আর কোন ফ্লাইট যাচ্ছেনা কোন এক যান্ত্রিক ত্রুটি জনিত সমস্যার কারণে। কিন্তু যেতে তো আমাকে হবেই। কি আর করা? অগত্যা আমি একটি প্রাইভেট প্লেন ভাড়া করে ফেললাম। কিন্তু প্লেনের ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য তো আমার নেই। আমি যেটা করলাম একটা বোর্ডে “Virgin Airlines- $29” লিখে বসে থাকা যাত্রীদের কে অফারটি ঘোষণা করলাম। ব্যাস! তাদের সহ উড়াল দিলাম Virgin Islands। তাদের টাকা দিয়েই আমার প্লেন ভাড়া করার টাকা উঠে গেলো।
এই হলেন অঘটনঘটন পটীয়সী রিচার্ড ব্র্যানসন। জীবনে এতো এতো উদ্যোগের সাথে নিজেকে জড়িয়েছেন যে অনেক সময় সঠিক পূর্ব প্রস্তুতিও নিতে পারেননি। কিন্তু এই জায়গাতেই যেন রিচার্ড অন্য সবার চেয়ে অনন্য। পথে নেমেই পথের সন্ধান খুঁজে পেয়েছেন।
সবশেষে উদ্যোক্তাদের জন্য তার একটা উক্তি দিয়ে শেষ করি-
“মানুষকে ব্যবসা সম্পর্কে জানাতে নিজে মাঠে নেমে পড়। লাখ লাখ টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ না করে নিজে বের হও মানুষের মাঝে, নিজেকে ছোট কর, খরচ বাঁচিয়ে ব্যাবসার খবর ছড়াতে যা যা লাগে কর। আমি মনে করি তোমরা যারা নিজেদের ব্যাবসা শুরু করছ, যদি তোমাদের পণ্য ভাল হয়, তবে তাকে পরিচিত করতে নিজেই লেগে যাও এবং বুদ্ধি খাটিয়ে বাজার দখল কর।”
Awesome.
An inspired person ! Who became hero from almost zero.
I like the person who made the impossible possible.
অসাধারণ একটি লেখা।আমাকে উৎসাহিত করেছে। ধন্যবাদ…