কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা ও সাফল্যকে পর্যালোচনা করার গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোকে বলা হয়ে থাকে কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর। এই ইন্ডিকেটরগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থান এবং প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করতে পারবেন। আর এই পরিমাপের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য পরবর্তীতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন, তাও অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।

দেশে প্রতিদিনই গড়ে উঠছে নিত্যনতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবগুলোই কিন্তু সমানভাবে জনপ্রিয় নয়। একটি ই-কমার্স সাইটকে গ্রাহকদের নিকট জনপ্রিয় করে তুলতে হলে, ঐ সাইটটির এমন কিছু পারফরম্যান্স থাকা জরুরি, যেগুলোর দ্বারা গ্রাহক সহজেই ঐ সাইটটির প্রতি আস্থা রাখতে সক্ষম হবে। আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের প্রতি গ্রাহকেরা আস্থা রাখবে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যও রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু সূচক বা ইন্ডিকেটর, যে ইন্ডিকেটরগুলোর মাধ্যমে সহজেই একটি ই-কমার্স সাইটের পারফরম্যান্স পরিমাপ করা সম্ভব। ই-কমার্স এ ব্যাবহৃত এসব ইন্ডিকেটরগুলোই কেপিআই(KPI) নামে পরিচিতি। এই ইন্ডিকেটরগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থান এবং প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করতে পারবেন। আর এই পরিমাপের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য পরবর্তীতে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন, তাও অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। চলুন আমরা এই আর্টিকেলটি থেকে ই-কমার্সের কেপিআই সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে নিই।

KPI-ecommerce-storrea2

কেপিআই (KPI) কী?

কেপিআই এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর’। কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থার কর্মক্ষমতা ও সাফল্যকে পর্যালোচনা করার সূচকগুলোকে বলা হয়ে থাকে পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর। আর একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য পর্যালোচনা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সূচক রয়েছে। এসব সূচকগুলোর মধ্য থেকে অধিক ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোকে বলা হয়ে থাকে কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর।

কেপিআই কেনো গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশে যেহেতু বিভিন্ন পণ্যের বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তাই এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চরম প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। আপনার সাইটটিকে এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আপনার ক্রমাগত উন্নতির দিকে ধাবিত করতে হবে। এজন্য চাই ব্যবসার নিয়মিত সঠিক পর্যালোচনা। কীভাবে করবেন? আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও উন্নয়ন কিংবা সার্বিক অবস্থা জানার জন্য এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আপনাকে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ধরনের কেপিআই এর সাহায্য নিতে হবে। কেপিআই বুঝে সেই অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে তার ফলাফল পর্যালোচনা করতে হবে।

ইকমার্সের জন্য বিভিন্ন ধরণের কেপিআই

কেপিআই বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। ব্যবসার রকম এবং প্রতিষ্ঠান ভেদে বিভিন্ন ধরণের কেপিআই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ই-কমার্স এর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কেপিআইকে সাধারণত পাঁচটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এগুলো হলো-

১. বিক্রয় (Sales)

২. মার্কেটিং (Marketing)

৩. গ্রাহক পরিষেবা (Customer service)

৪. ম্যানুফ্যাকচারিং (Production)

৫. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (Project management)

বিক্রয় ক্ষেত্রের কেপিআই

নির্দিষ্ট সময়ে যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, কোয়াটার্লি, হাফ ইয়ারলি, বাৎসরিক আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ক্ষেত্রের সার্বিক অবস্থা কেমন এবং আপনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিক্রয় কার্যক্রম চলছে কি না এসব বুঝতে আপনাকে যেসব কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরগুলোর সাহায্য গ্রহণ করতে হবে সেগুলো হলো

১. মোট বিক্রির পরিমান – রেভিনিউ বা মোট বিক্রিত টাকার পরিমান

২. অর্ডারের পরিমান – মোট এবং গড়ে পণ্য অর্ডারের পরিমাণ

৩. মোট মুনাফা- বিক্রয় মূল্য থেকে পণ্য তৈরির খরচ বিয়োগ করে মোট মুনাফা সহজেই বের কারা যায়।

৪. গড় মার্জিন – একট নির্দিষ্ট সময়ের প্রফিট মার্জিনের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে গড় মার্জিন।

৫. কনভার্সন হার- কোনো সাইটের মোট ভিজিটরকে মোট কনভার্সনস সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে কনভার্সন হার নির্ণয় করা হয়।

৬. শপিং কার্ড পরিত্যক্তের হার – কতজন প্রোডাক্ট কার্টে তুলেছে কিন্তু চেক আউট করেনি সেই হার।

ডিস্কাউন্ট সহ ইকমার্স সলিউশন এখানে

৭. নতুন গ্রাহক বনাম চলতি গ্রাহকদের হার – এই পর্যালোচনার মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছে তা বুঝতে পারবেন। আবার পুরাতন গ্রাহকদের ধরে রাখতে পারছেন কি না, তাও জানতে পারবেন।

৮. সিওজিএস- পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কত খরচ হয়েছে তা বের করে দেবে সিওজিএস তথা কসট অব গুডস সোল্ড। উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব খরচই জানতে পারবেন।

৯. টোটাল অ্যাভেলঅ্যবেল মার্কেট রিলেটিভ টু অ্যা রিটেইলার’স শেয়ার অব মার্কেট – এই কেপিআইয়ের মাধ্যমে শিল্প ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসার বৃদ্ধিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন। এতে আপনার ব্যবসা কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে, তা সহজেই বুঝতে পারবেন।

১০. প্রোডাক্ট অ্যাফাইনিটি- কোন পণ্যগুলো গ্রাহকেরা একসঙ্গে ক্রয় করছে, তা বুঝতে পারবেন এই ইন্ডিকেটরের সাহায্যে।

১১. প্রোডাক্ট রিলেশনশিপ – গ্রাহক কোন পণ্য দেখার পর কোন পণ্য দেখেছে, এটি এই সূচকের মাধ্যমে অনুধাবন করা যায়।

১২. ইনভেন্টরি লেভেলস- কী পরিমাণ পণ্য আপনার সংগ্রহে আছে, কত দ্রুত পণ্য বিক্রি হতে পারে, তা বুঝতে পারবেন এই কেপিআইয়ের মাধ্যমে।

১৩. প্রতিযোগিতামূলক মূল্য – এই কেপিআইয়ের দ্বারা আপনি নিজের ও আপনার প্রতিযোগীদের মধ্যে ব্যবসার বৃদ্ধি ও সাফল্য অনুমান করতে পারবেন।

১৪. কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু (CLV)- আপনার পণ্যের সঙ্গে গ্রাহকদের সম্পর্ক কত দিনের এবং তার ব্যবসায়িক মূল্য কত তা জানা যাবে।

১৫. রেভিনিউ পার ভিজিটর (RPV)-  আপনার সাইটে কী পরিমাণ ব্যক্তি এক বারের জন্য হলেও ভিজিট করেছে এবং খরচ করছে তার গড় বোঝা যাবে এই সূচকের সাহায্যে।

১৬. চার্ন রেট- এই কেপিআই আপনাকে বলে দেবে গ্রাহক কত দ্রুত আপনার ব্র্যান্ড ত্যাগ করেছে, অর্থাৎ পুনরায় কিনছে না অথবা সাবস্ক্রিপশন রিনিউ না করে বাতিল করেছে।

১৭. গ্রাহক অর্জন খরচ- আপনার কোম্পানি নতুন একটি গ্রাহক সংগ্রহে কী পরিমাণ খরচ করে তা জানিয়ে দেবে এই কেপিআই।

মার্কেটিংয়ের জন্য কেপিআই

আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিপণন বা প্রচারণা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা জানার জন্য রয়েছে মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটরস। এক্ষেত্রেও বিক্রয় কেপিআইয়ের প্রভাব রয়েছে। আপনি যেই যেই পদ্ধতিতে মার্কেটিং করছেন সেগুলো কতটুকু কাজ করছে তা জানার জন্যই এই মার্কেটিং কেপিআই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গুগল অ্যানালিটিক্স এই ধরণের কেপিআই গুলোর বিশ্লেষণের জন্য খুবই কার্যকরী একটি টুল। চলুন মার্কেটিং সম্পর্কীয় কিছু কেপিআই জেনে নিই।

১. সাইট ট্র্যাফিক – আপনার ই-কমার্স সাইটে মোট এবং গড়ে কত ভিজিটর এসেছে তা জানতে পারবেন।

২. নতুন ভিজিটর বনাম রিটার্নিং ভিজিটর – সাইটে নতুন কয়জন আসছে এবং আগেও ভিজিট করেছেন এরকম কয়জন আছে সেই হিসাব।

৩. টাইম অন সাইট- ভিজিটরেরা কী পরিমাণ সময় আপনার সাইটে অবস্থান করেছে তা জানা যাবে এই কেপিআইয়ের মাধ্যমে।

৪. বাউন্স রেট – এই সূচকটি আপনাকে জানিয়ে দেবে শুধুমাত্র হোম পেইজ বা ল্যান্ডিং পেইজ দেখার পর কতজন ব্যবহারকারী আর কোন পেইজ ভিজিট না করেই আপনার সাইট থেকে প্রস্থান করেছে।

ওয়েবসাইট আসলেই দরকার কিনা যাচাই করুন!

৫. পেজ ভিউজ পার ভিজিট-  একজন ভিজিটর সাইটে গড়ে কত পৃষ্ঠা ভিজিট করেছে তা বের করতে পারবেন এই কেপিআইয়ের মাধ্যমে।

৬. এভারেজ সেশন ডিউরেশন- একজন ব্যক্তি আপনার সাইটে একবার ভিজিট করার সময়, গড়ে কী পরিমাণ সময় আপনার সাইটে ব্যয় করেছে তাকেই বলা হয় এভারেজ সেশন ডিউরেশন।

৭. ট্র্যাফিক উৎস- ট্র্যাফিকের বিভিন্ন উৎস রয়েছে, যেমন: অর্গানিক সার্চ, পেইড এডস, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি, এগুলোর মধ্যে কোন উৎস থেকে ট্র্যাফিক আপনার সাইটে এসেছে তা জানতে পারবেন এই কেপিআই এর মাধ্যমে।

এসব কেপিআই ছাড়াও আরো কিছু সূচক ব্যবহার হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-

৮. মোবাইল সাইট ট্র্যাফিক

৯. ডে পার মনিটরিং

১০. নিউজলেটার সাবস্ক্রাইবারস

১১. টেক্সটিং সাবস্ক্রাইবারস

১২. সাবস্ক্রাইবার গ্রোথ রেট

১৩. ইমেইল ওপেন রেট

১৪. ইমেইল ক্লিক- থ্রু রেট (CTR)

১৫. আন-সাবস্ক্রাইবারস

১৬. সোসাল মিডিয়া ফলোয়ার্স এন্ড ফ্যানস

১৭. সোশ্যাল মিডিয়া এঙ্গেজমেন্ট

১৮. ক্লিক

১৯. এভারেজ সিটিআর (CTR)

২০. এভারেজ পজিশন

২১. পে-পার- ক্লিক (PPC) ট্র্যাফিক ভলিউম

২২. ব্লগ ট্র্যাফিক

২৩. নাম্বার এন্ড কোয়ালিটি অফ প্রডাক্ট রিভিউস

২৪. ব্যানার এবং ডিসপ্লে এডভারটাইজিং

২৫. অ্যাফিলিয়েট পারফরম্যান্স রেট

গ্রুপ থেকে অনলাইন ব্যবসা শিখুন

গ্রাহক পরিষেবা সংক্রান্ত কেপিআই

গ্রাহকের আপনার ই-কমার্স সাইটের প্রতি সন্তুষ্ট আছে কি না কিংবা  গ্রাহক পরিষেবার সার্বিক অবস্থা কেমন তা জানতে ও বুঝতে যেসব কেপিআইয়ের সাহায্য নিতে হবে সেগুলো হলো-

১. কাস্টমার স্যাটিসফেকশন স্কোর (CSAT)

২. নেট প্রমোটার স্কোর (NPS)

৩. হিট রেট

৪. কাস্টমার সার্ভিস ইমেইল কাউন্ট

৫. কাস্টমার সার্ভিস ফোন কল কাউন্ট

৬. কাস্টমার সার্ভিস চ্যাট কাউন্ট

৭. ফার্স্ট রেসপন্স টাইম

৮. এভারেজ রিস্যলুশান টাইম

৯. অ্যাকটিভ ইস্যুস

১০. ব্যাকলগস

১১. কনসার্ন ক্লাসিফিকেশন

১২. সার্ভিস এসক্লাশন রেট

রিয়েল লাইফ ই-কমার্স হ্যাকস জানুন

উৎপাদন সংক্রান্ত কেপিআই

আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করতে যেসব কেপিআই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সেগুলো হলো-

১. সাইকেল টাইম

২. ওভারঅল ইকুইপমেন্ট ইফেক্টিভনেস(OEE)

৩. ওভারঅল লেবার ইফেক্টিভনেস (OLE)

৪. প্রোডাক্ট ইয়েল্ড (Yield)

৫. ফার্স্ট টাইম ইয়েল্ড (FTY) এবং ফাস্ট টাইম থ্রু (FTT)

৬. নাম্বার অফ কমপ্লিয়েন্স ইভেন্টস অফ ইনসিডেন্স

প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত কেপিআই

সর্বোপরি আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা বা অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য যেসব কেপিআই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, সেগুলো হলো –

১. আওয়ারস ওয়ার্কড

২. বাজেট

৩. রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট

৪. কস্ট ভেরিয়েন্স

৫. কস্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্স (CPI)

একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সব বিভাগেই সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে কেপিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেপিআই অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির তার ব্যবসায়িক উন্নয়নে কি কি করণীয়, কোথায় ভুলগুলো হচ্ছে, পরবর্তীতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায়। তবে প্রথমে তার ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক কেপিআই গুলো নির্ধারণ করতে হবে, এক্সিকিউট করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমায় তার পারফর্মেন্স যাচাই করতে হবে।

ভাল মানের ই-কমার্স সলিউশন চাই?

(Visited 2,599 times, 1 visits today)
3

Comments